Posts

Showing posts from May, 2020

জামাইষষ্ঠীর ইতিহাস

     আজ জামাইষষ্ঠী। বাংলার হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের ঘরে ঘরে একটি অত্যন্ত আনন্দের উৎসব হিসেবে এই জামাইষষ্ঠী উদ্‌যাপিত হয়। কিন্তু আসলে কেন এই উৎসব, কি কারণে হয় তা কি আমরা কেউ জানি। হয়তো বা জানি। আবার হয়তো বা জানি না। আবার হয়তো যেটা জানি সেটা ঠিক না।      যাহোক্‌, আমরা সকলেই একটা বিষয় জানি যে, বাংলার ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের। কিন্তু সেই ইতিহাসে জামাইষষ্ঠী বলে কোনো উৎসবের নাম আমরা মোটামুটি ঊনবিংশ শতকের আগে সেইভাবে কোথাও কোনো উল্লেখ পাইনা। এবার প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কেন এবং কি কারণে আগে ছিল না কিন্তু পরে যোগ হলো। প্রথমেই বলে নেই আসলে কি হয় এই দিনটিকে ঘিরে। এদিন আসলে মা ষষ্ঠীর পূজো হয়। মা ষষ্ঠি মূলত শিশুদের রক্ষাকারী একজন লৌকিক দেবী। তিনি সন্তানকে যেমন রক্ষা করেন আবার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় মাকে সকল বাধা বিঘ্ন থেকেও দূরে রাখেন বলে সাধারণে বিশ্বাস। সে কারণে সন্তানের কল্যানার্থে মায়েরা এই দিনে এই পূজো করে সন্তানকে আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন। এছাড়া সন্তান ধারণ কালে গর্ভবতী মায়ের ষষ্ঠ মাসে মা ষষ্ঠীর পূজো করে গর্ভবতী মাকে সুস্হ্য সন্তান কামনায় সকলে আশীর্বাদ করে থাকেন...

'ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টি'র জন্ম ইতিহাস

          আমরা এখানে অবিভক্ত ভারতবর্ষের কমিউনিষ্ট পার্টির কথা বলছি। আজ কমিউনিষ্ট পার্টি নানাভাবে বা বলা ভাল নানা মতাদর্শগত কারণে অনেক ভাগে বিভক্ত। যদিও সেসব আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমাদের বিষয় - প্রাতিষ্ঠনিক ভাবে ভারতবর্ষে পার্টি কীভাবে সংগঠিত হলো। শুরুটা তো সবসময় একটি বিন্দু থেকেই হয়। সেই এক বিন্দুর খোঁজেই আজকের এই কলম ধরা।        কাগজে কলমে ভারতবর্ষের মাটিতে কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা হয় ২৬শে ডিসেম্বর ১৯২৫। কিন্তু মার্কসবাদী কমিউনিষ্টদের মতে ‘ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টি’র গোড়াপত্তন হয় আরো ৫বছর আগে ১৭ই অক্টোবর ১৯২০ সালে তাসখন্দে (আজকের উজবেকিস্তানের একটি রাজধানী শহর যেটা একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল)।        তবে ত্রিশের দশকের শেষ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে পার্টির কোনো সদস্যসংখ্যা চোখে পড়ে না। রীণা ভাদুরীর প্রবন্ধ সূত্রে জানা যায় যে, “ত্রিশের দশকের প্রথমে জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আন্দোলনের আপাত ব্যর্থতা ও চট্টগ্রাম আস্ত্রাগার লুন্ঠনের পরবর্তী কালে ভারতের বিভিন্ন জেলখানায়, বন্দীশিবিরে, আন্দামানে নির্বাসি...

ভারতীয় গণনাট্য সংঘের ‘প্রতীক’ (The Logo of IPTA)

     আমরা যারা নাটক নিয়ে চর্চা করি তারা সকলেই কমবেশি গণনাট্যের সাথে পরিচিত। কেউ হয়তো সেই আদর্শ নিয়ে নাট্যচর্চায় রত আবার কেউ হয়তো ইতিহাস হিসেবেই গণনাট্য আন্দোলনকে দেখে থাকেন। যদিও ইতিহাস নিয়ে এখানে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়।      এই করোনা সংকটকালে নিজের পড়াশোনা নিয়েই একটু ব্যস্ততায় কাটছে। তারই এক ফাঁকে হঠাৎ অভীক দা’র (অভীক ভট্টাচার্য, সম্পাদক, ভাবনা থিয়েটার) কল্যাণে হাতে এলো প্রগতি চেতনা প্রগতির পথিকেরা নাম্নী একটি বই। এখনো পুরোটা পড়ে উঠতে পারিনি। শুধু রীণা ভাদুরী রচিত প্রথম প্রবন্ধটা পড়া হয়েছে। বেশ শক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ এবং ‘ভারতীয় গণনাট্য সংঘ’ নিয়ে। পরবর্তীতে কোথাও সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে অবশ্যই।      আমাদের আলোচনার বিষয় হলো গণনাট্যের যে লোগোটা আমরা দেখে থাকি বা যেটা দেখলেই আমরা বুঝে যাই এটা গণনাট্যের লোগো – সেই নিয়ে। মানে হলো, সেই লোগোটি কীভাবে তৈরী হয়েছে। যখন জেনেছি তখন আমার কাছে খুবই মজাদার একটা ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। হয়তো অনেকেই জানেন। তারপরেও আমার ক্ষুদ্র আনন্দটুকু সকলের সাথে একটু ভাগ করে নিলাম।  ...

আমার মা

       আজ বিশ্ব মা দিবস। পৃথিবীর কোনো দিবস নিয়েই আমার আসলে ততোটা মাথাব্যথা নেই। ধর্মীয় দিবস হলে তো কথাই নেই – I hate all this । ঘটা করে কোনো দিবস উদ্‌যাপন করতে আমার কখনোই ভালো লাগে না। কিছু কিছু দিন আছে খুবই ব্যক্তিগত স্তরে থাকলেই ভালো লাগে। যাই হোক্‌, সকলের মতো মাকে আমিও ভীষণ ভালোবাসি। কিছুটা প্রেমিকার মত। এমনই সে ভালোবাসা যে আমার প্রেমিকা মাঝে মাঝে বলে ফেলে – ‘আমি কি তোমার ‘মা’ নাকি’। তখন আমার নিজের এই ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্খাটাকে imagine করে ভয়ে শিহরিত হই। আমরা খুবই পবিত্রতার সহিত মাকে মনে করি সবসময়। মোদ্দা কথা, মাকে ঈশ্বর জ্ঞানে ভক্তি করি। ঈশ্বর প্রেমের মতই সেটি পবিত্রতায় মোড়া। আর সেখানেই আমার মনে এক প্রশ্নের উঁকি দেয় যে, এত প্রেমের মাঝে কোথাও মায়ের একান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করছি না তো।        ‘মা’ শব্দটিকে ঘিরে আমার নানা সময় নানা ধরণের ভাবনা তৈরী হয়েছে। যেটুকু মনে দাগ কেটেছে সেগুলোকে ঘিরেই এই উত্তর খোঁজার ক্ষুদ্র চেষ্টা মাত্র। আমাদের সমাজে আমরা ‘মা’কে একটি institution বলেই মানি । যেখানে ‘মা’ শব্দটির সম্মান রক্ষার্থে কোনো ক...

ঘরোয়া সিরিজ - "রাখীবন্ধন উৎসব ও রবীন্দ্রনাথ"

          'রাখীবন্ধন উৎসব' কীভাবে বাঙালী জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল সে বিষয় নিয়েই আজকের এই ছোট্ট আলোচনা। কয়েকদিন ধরেই আমি ‘ঘরোয়া সিরিজ’ নামে একটা সিরিজ লিখছি। ঘরোয়া অবন ঠাকুরের স্মৃতিকথার বয়ানে রানী চন্দের লেখা একটি Memoirs । এই সিরিজের সবগুলো গল্পই ঘরোয়া গ্রন্হ থেকে নেওয়া। গ্রন্হটি নিয়ে অল্পবিস্তর কথা “ Book Review – ঘরোয়া ”   পর্বটিতে লেখা আছে।           প্রথমেই বলে রাখা ভালো 'রাখীবন্ধন উৎসব' হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনের মধ্যকার অটুট বন্ধনের একটি উৎসব। কিন্তু এটি বাঙালী হিন্দু সমাজে কখনোই ছিল না। মূলত এটি উত্তর ভারতের সামাজিক প্রথা অনুসারে প্রচলিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই উৎসবের কিছু পৌরাণিক কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে। সেটি অনলাইনে লভ্য। খুব সহজেই পড়ে নেওয়া সম্ভব।           আজ ২৫শে বৈশাখ। গুরুদেবের ১৫৯ তম জন্মদিন। তাকে স্মরণ করেই আজকের এই ঘরোয়া আয়োজন। এই ঘটনাটি বিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার দিকের ঘটনাই বলা যায়। সম্ভবত ১৯০৫ সাল। চারিদিকে তখন স্বদেশী স্বদেশী রব উঠেছে যেন। চতুর্দিকে স্বদেশী...

Book Review - আমি মৃণালিনী নই

আমি মৃণালিনী নই লেখক: হরিশংকর জলদাস প্রকাশনা: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, বাংলাদেশ প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৪ একেবারে এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেলার মত একটা বই। আমার তো তাই হয়েছে। ১৭০ পৃষ্ঠার বই আনুমানিক ৫ঘন্টা লেগেছে পড়তে। একথায় অসাধারণ। যাদের রবীন্দ্রনাথ নিয়ে জানবার কিছুমাত্র উৎসাহ আছে তাদের জন্য এই বই অবশ্য পাঠ্য। শ্রীমতি মৃণালিনী ঠাকুর (ভবতারিণী রায় চৌধুরী)-এর আত্মকথন অবলম্বনে রচিত এই আত্মকথনটিকে উপন্যাস আকারে লেখক অত্যন্ত সুচারুরূপে পুরো রবীন্দ্র সময়কালের জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ীর পরিবেশকে তুলে ধরেছেন। যেখানে রবীন্দ্রনাথের দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়ানের পাশাপাশি ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের কুটনীতি সম্পর্কেও বেশ কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে মৃণালিনীর জীবনের এক দু:সহ কষ্টবোধ। উপন্যাসের এক সুদীর্ঘ সময় ধরে মৃণালিনী তাঁর শ্বশুরবাড়ী আসার পূর্বে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তি জীবনের নানা কথা লিখেছেন যা ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তাঁর শোনা। আর অন্য অংশটি তাঁর দাম্পত্য জীবনে ঘটে যাওয়া নানা পারিবারিক দ্বন্দ্বসংঘাত। বলে রাখা ভাল, রবীন্দ্র পত্নী ভবতারিণী পরে মৃণাল...

সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রবন্ধ "গুরুদেব" অবলম্বনে 'গুরুকথা'

গুরুকথা আজ পয়লা মে ২০২০ থেকে শুরু করলাম সৈয়দ মুজতবা আলী পড়া। শান্তিনিকেতনে পড়াকালীন সময়ে কারণে অকারণে অনেকের মুখেই শুনেছি তাঁর কথা। কিন্তু পড়া হয়ে উঠেনি কখনো। আজ সেই নিন্দা ঘুচল আমার। পড়ে নিলাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লেখা তাঁর প্রবন্ধ ‘গুরুদেব’। যদিও রচনা সমগ্রের গঠনশৈলীটা অন্যভাবে শুরু হচ্ছে কিন্তু সে তো প্রকাশকের ব্যাপার। মুজতবা আলী তো আমার শান্তিনিকেতনের মানুষ; গুরুদেবশিষ্য এক প্রিয় মুখ। তাকে তো আমার মতো করেই পড়তে হবে। তাই শুরু করলাম গুরুদেবের প্রিয় শিষ্যের লেখা প্রবন্ধ  “গুরুদেব”  দিয়ে। সবাই বলে মুজতবা আলী পড়া যায় না কারণ পড়তে গেলেই চোখে ছবি আসতে শুরু করে। আর ছবি এলে পড়া হবে কি করে। বিশ্বাস হতো না। কিন্তু প্রবন্ধটি পড়ে নিজ চোখে গুরুদেবকে দেখতে পেলাম। ওদের দুজনের আলাপ চারিতা সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলাম। অসাধারণ। প্রবন্ধে আশ্রমবালক মুজতবা আলী আশ্রমে গুরুদেবের সাহিত্য পাঠদানকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তার তুলনা করে এমন সাধ্য কার। প্রবন্ধের এক জায়গায় তিনি বলছেন, “কীটস, শেলি, ব্রাউনিং, ওয়াডস্‌ওয়ার্থকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ...ইন্দ্রজাল কতবার দেখেছি আর ভেবেছি...

Book Review - পরিক্রমা তিন দশক

পরিক্রমা তিন দশক প্রকাশনা: ' মীরা প্রকাশন ' প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০১৮ (পরিবর্ধিত ২য় সংস্করণ) সম্পাদনা: দেবাশিস চক্রবর্তী অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা হলো। বইটি সম্পর্কে শমীক দা (অধ্যাপক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রথম আমাকে বলেন। তখন তিনি বলেননি যে, তার শৈল্পিক হাতেই বইটির সম্পাদনা হয়েছিল। সেই থেকে অনেক খুঁজেছি বইটি; সেদিন (২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০) হঠাৎ করেই পেয়ে গেলাম সুজাতা সদনে আয়োজিত এক নাটকের বইমেলাতে। আজ আর মনে নেই বইমেলাটির আয়োজন কে করেছিল। তবে ধন্যবাদ আয়োজকদের এই ধরণের নাট্যমেলার জন্য। বিশেষ ধন্যবাদ ‘মীরা প্রকাশন’কে এমন একটি বই পুণ:প্রকাশের জন্য। বইটি প্রথম যখন শমীক দার পরিকল্পনায় এবং সম্পাদনায় বের হয় সেটা ছিল ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে পশ্চিম বাংলার বিখ্যাত নাট্যকার এবং নির্দেশক বাদল সরকারের তিন দিনের গ্রাম পরিক্রমার একটি লেখচিত্র। স্বভাবতই সেই বই আজ আর পাওয়া যায় না। তবে বর্তমানে পরিক্রমা তিন দশক নামে প্রকাশিত বইটির সম্পাদনা করেছেন দেবাশিস চক্রবর্তী। যদিও বইটির কভার পৃষ্ঠার ভিতরের প্রথম পাতায় শুধু উনার নাম লিখা আছে ‘সম্পাদনা’ কথাটির উল্লেখ নেই। যেটা অবশ্যই থাকা উচিৎ ছিল ব...