সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রবন্ধ "গুরুদেব" অবলম্বনে 'গুরুকথা'
গুরুকথা
আজ পয়লা মে ২০২০ থেকে শুরু করলাম
সৈয়দ মুজতবা আলী পড়া। শান্তিনিকেতনে পড়াকালীন সময়ে কারণে অকারণে অনেকের মুখেই
শুনেছি তাঁর কথা। কিন্তু পড়া হয়ে উঠেনি কখনো। আজ সেই নিন্দা ঘুচল আমার। পড়ে নিলাম
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লেখা তাঁর প্রবন্ধ ‘গুরুদেব’। যদিও রচনা সমগ্রের গঠনশৈলীটা অন্যভাবে
শুরু হচ্ছে কিন্তু সে তো প্রকাশকের ব্যাপার। মুজতবা আলী তো আমার শান্তিনিকেতনের
মানুষ; গুরুদেবশিষ্য এক প্রিয় মুখ। তাকে তো আমার মতো করেই পড়তে হবে। তাই শুরু
করলাম গুরুদেবের প্রিয় শিষ্যের লেখা প্রবন্ধ “গুরুদেব” দিয়ে।
সবাই বলে মুজতবা আলী পড়া যায় না
কারণ পড়তে গেলেই চোখে ছবি আসতে শুরু করে। আর ছবি এলে পড়া হবে কি করে। বিশ্বাস হতো
না। কিন্তু প্রবন্ধটি পড়ে নিজ চোখে গুরুদেবকে দেখতে পেলাম। ওদের দুজনের আলাপ
চারিতা সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলাম। অসাধারণ।
প্রবন্ধে আশ্রমবালক মুজতবা আলী
আশ্রমে গুরুদেবের সাহিত্য পাঠদানকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তার তুলনা করে এমন সাধ্য
কার। প্রবন্ধের এক জায়গায় তিনি বলছেন, “কীটস, শেলি, ব্রাউনিং, ওয়াডস্ওয়ার্থকে নিয়ে
রবীন্দ্রনাথের ...ইন্দ্রজাল কতবার দেখেছি আর ভেবেছি, হায়, এ বর্ণনা যদি কেউ লিখে
রাখত তাহলে বাঙালী তো তার রস পেতই, বিলেতের লোকও একদিন ওগুলো অনুবাদ করিয়ে নিয়ে
তাদের নিজের কবির কত অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্য দেখতে পেত”।
যে কারণে এই প্রবন্ধ নিয়ে লেখা
সেই প্রসঙ্গে ফিরি। প্রবন্ধের ঘটনাস্হল জার্মানীর মারবুর্গ – গুরুদেব গিয়েছেন কোনো
এক সভায় বক্তৃতা করতে। সেখানেই তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন মুজতবা আলীকে।
গুরুদেব ডেকেছেন বলে কথা। সভা শেষে এক পলকের জন্য প্রণামের সুযোগ মিল্লেও
অমাত্যদের ভীরে খুব একটা কথা হলো না। রবীন্দ্রনাথ বলে কথা, যে সে লোক তো নন। পরে
মুজতবা আলী হোটেলে অমিয় চক্রবর্তীর কাছে বিদায় নিতে গেলে তিনি মুজতবা আলীকে বলেন,
‘সে কি কথা, দেখা করে যান’।
মুজতবা
আলী খুবই উৎফুল্ল হয়ে বল্লেন, “তাহলে আপনি গিয়ে বলুন”। চক্রবর্তী মহাশয় বল্লেন
“আরে সে তো আর পাঁচজনের জন্য। আপনি সোজা গিয়ে নক্ করুন”।
গুরুদেব
সান্নিধ্যে কিছুমাত্র কথা হলো। গুরুদেব ক্লান্ত ছিলেন। মুজতবা আলী যখন উঠল গুরুদেব
অমিয় চক্রবর্তীকে ডেকে বল্লেন...“অমিয়, একে ভালো করে খাইয়ে দাও”। মুজতবা আলীর শংকা
এই যে, তাঁর পাঠকরা গুরুদেবের এমন কথা শুনে হয়তো ক্ষুব্ধ হবেন – তা হতেই পারেন;
কিন্তু আমার এই কথাটা শুনে যার পরনাই হাসি লেগেছে। কারণ আমি আমার সময়ের আশ্রম বালক বালিকাদের
অনেক কাছ থেকে দেখেছি। তাই গুরুদেবের এই Expression টা
আমার বড্ড পরিচিত। আমার এই অনুভূতি আশ্রম বালক-বালিকারা যখন মুজতবা আলী পড়বে তারাও নিশ্চয়ই
গুরুদেবের কথায় আনন্দ পাবে বলেই বিশ্বাস।
তবে
মুজতবা আলী কিন্তু একটু অন্যভাবে তাঁর গুরুর কথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি
সক্রেটিসের মৃত্যক্ষণের সময়কে উল্ল্যেখ করে লিখছেন, সক্রেটিস যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়ছে তখন তাঁর শিষ্যরা কানের কাছে চিৎকার করে জানতে চাইছে তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা।
সক্রেটিস বলেছিল, “পরশু দিন যে মুর্গীটা খেয়েছিলুম তার দাম দেওয়া হয়নি। দিয়ে দিয়ো”।...হা হা হা হা হা।
“সব দিকে
যাঁর দৃষ্টি তিনিই তো প্রকৃত গুরু”... (সৈয়দ মুজতবা আলী)
১১
খণ্ডের সৈয়দ মুজতবা আলী রচনা সমগ্র-এর পুরোটা PDF-এ সংরক্ষিত আছে। কেউ যদি মুজতবা আলীকে
পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে কমেন্ট বক্সে আপনার ই-মেইল পাঠালে PDF কপি
মেইলে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে।
Comments
Post a Comment