Book Review - আমি মৃণালিনী নই

আমি মৃণালিনী নই

লেখক: হরিশংকর জলদাস

প্রকাশনা: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, বাংলাদেশ

প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৪


একেবারে এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেলার মত একটা বই। আমার তো তাই হয়েছে। ১৭০ পৃষ্ঠার বই আনুমানিক ৫ঘন্টা লেগেছে পড়তে। একথায় অসাধারণ। যাদের রবীন্দ্রনাথ নিয়ে জানবার কিছুমাত্র উৎসাহ আছে তাদের জন্য এই বই অবশ্য পাঠ্য।

শ্রীমতি মৃণালিনী ঠাকুর (ভবতারিণী রায় চৌধুরী)-এর আত্মকথন অবলম্বনে রচিত এই আত্মকথনটিকে উপন্যাস আকারে লেখক অত্যন্ত সুচারুরূপে পুরো রবীন্দ্র সময়কালের জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ীর পরিবেশকে তুলে ধরেছেন। যেখানে রবীন্দ্রনাথের দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়ানের পাশাপাশি ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের কুটনীতি সম্পর্কেও বেশ কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে মৃণালিনীর জীবনের এক দু:সহ কষ্টবোধ। উপন্যাসের এক সুদীর্ঘ সময় ধরে মৃণালিনী তাঁর শ্বশুরবাড়ী আসার পূর্বে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তি জীবনের নানা কথা লিখেছেন যা ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তাঁর শোনা। আর অন্য অংশটি তাঁর দাম্পত্য জীবনে ঘটে যাওয়া নানা পারিবারিক দ্বন্দ্বসংঘাত। বলে রাখা ভাল, রবীন্দ্র পত্নী ভবতারিণী পরে মৃণালিনী এই বাড়িতে যখন এসেছিল তখন তাঁর বয়স ছিল ৯ বছর আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স ছিল তখন ২২ বছর। তাদের বিয়ের অব্যবহিত পরেই (আনুমানিক ৩ থেকে ৪ মাস পর) কাদম্বরী দেবী (নতুন বৌঠান) মারা যান। তাই নতুন বৌঠানের সাথে রবির সম্পর্কের যতটা কথা এই উপন্যাসে পাওয়া যায় সেটা মৃণালিনীর বিয়ের আগেই এটা নিশ্চিত।

আজ অবধি আমি আমার রবীন্দ্রনাথকে যেভাবে চিনতাম সেটা শুধুই শান্তিনিকেতনের রূপকার রবি ঠাকুর বা নাট্যকার রবিঠাকুর বা অভিনেতা রবি ঠাকুর বা গায়ক রবি ঠাকুর বা সকল কবির যিনি প্রধান কবি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু এই উপন্যাসে এ আমি কোন্‌ রবিকে পড়লাম। সেই রবিকে এইভাবে দেখতে বড্ড সংকোচ হলো। কিন্তু এইভাবেও মনে হয়, স্বামী রবীন্দ্রনাথকে দেখবার দরকার আছে। না হলে পরিপূর্ণভাবে তাকে চেনার ক্ষেত্রে কোথায় যেন একটা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। 

আমার মত অনেকের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরতুল্য হলেও ভুলে গেলে চলবে না তিনিও কিন্তু রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন। তিনিও তাঁর পারিবারিক জীবনে অনেক ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছেন। যদিও তাঁর ব্যক্তি জীবন নিয়ে আমাদের খুব একটা চর্চা করার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়না। তার পরেও ব্যক্তি মৃণালিনীর তো অধিকার আছেই তাঁর নিজের কথাগুলো প্রকাশ করবার। সেই সূত্রে যদি অন্য এক রবিকে চেনা যায় তাতে দোষের কি।

সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রথম এই বইটির লিংক পাওয়া যায়; তাই বইটির ফ্রি অনলাইন ভার্সনটাই পড়েছি। কেউ যদি পড়তে চান তাহলে আপনার ই-মেইল আইডিটা কমেন্টে লিখে দিলে PDF কপি মেইল করে দিতে পারি। 

ধন্যবাদ।

বই পড়ুন। ভালো থাকুন।  

 

 

 


Comments

Popular posts from this blog

নাট্য আলোচনা - রাজা

বাংলা ভাষার ‘প্রথম’ নিদর্শন গীতগোবিন্দ কাব্য

Book Review: প্রগতির চেতনা প্রগতির পথিকেরা

জামাইষষ্ঠীর ইতিহাস

ভারতীয় গণনাট্য সংঘের ‘প্রতীক’ (The Logo of IPTA)

আমার মা

ঘরোয়া সিরিজ: শুচিবায়ী বাঙালী