Book Review - ঘরোয়া


ঘরোয়া
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শ্রীরানী চন্দ





এখনো যদি না পড়া হয়ে থাকে তাহলে এখনই পড়ে ফেলা উচিৎ। যদি বাড়িয়ে না বলা হয়ে যায় তাহলে সকল বাঙালী মাত্রেই উচিৎ এক নিশ্বাসে বইটি পড়ে ফেলা। যদিও শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত কেউ উঠতে পারবেন না বলেই আমার বিশ্বাস। এত স্বতস্ফূর্তভাবে গল্পগুলো উপস্হাপিত হয়েছে মনে হয় যেন ছোটোবেলার ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ পড়ছি।

অসাধারণ একটি বই। বইটি আসলে মূলত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথা তিনি জোড়াসাঁকোর বাড়ীতে বসে রানী চন্দকে তার স্মৃতির পাতা উল্টে গল্প বলেছেন আর রানী চন্দ শান্তিনিকেতনে ফিরে গুরুদেবকে শোনাবেন বলে সব লিখে রেখেছেন। গুরুদেব তখন খুবই প্রৌঢ়। প্রতিদিন একটি দুটি গল্প তিনি পড়তেন আর মহা খুশি হতেন তিনি যৌবনের কর্মী রবীন্দ্রনাথকে দেখে।

গল্পগুলো পড়ে রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরর একটি উক্তি রাণী চন্দের ভূমিকায় পাওয়া যায়। গুরুদেব বলছেন, “এ অতি সুন্দর হয়েছে। অবন কথা কইছে, আমি যেন শুনতে পাচ্ছি। কথার একটানা স্রোত বয়ে চলেছে – এতে হাত দেবার জায়গা নেই, যেমন আছে তেমনিই থাক্‌”। পরবর্তীতে গুরুদেবের ইচ্ছানুযায়ী প্রথম দিকের গল্পগুলো প্রবাসীতে ছাপা হয়। কিন্তু তাঁর ইচ্ছায় যখন বই আকারে বইটি বেরিয়ে এসেছে তখন তিনি স্বর্গবাসী হয়েছেন।

আমরা যে বইটি আমাদের হাতে পাই সেটি ‘বিশ্বভারতী গ্রন্হনবিভাগ’, কোলকাতা থেকে বেরিয়েছে যার প্রকাশকাল ‘অগ্রহায়ণ ১৩৯৮’।

বইটিতে আমরা যেমন যৌবনের রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাই তেমনি খুঁজে পাই ঠাকুববাড়ীর সাংস্কৃতিক আবহকে। সাথে আছে সেই বাড়ীর মা, পিসী, কাকা, জ্যাঠা, জ্যাঠাইমাদের নানান গল্প। সাথে পাওয়া যাবে স্বল্প পরিসরে ঠাকুরবাড়ীর নাটক মঞ্চায়নের ইতিহাস যেখানে রবীন্দ্রনাথ তো আছেই, সাথে আছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু এমন কত বড় বড় মহারথীদের নি:শব্দ পদচারনা।  

Comments

Popular posts from this blog

নাট্য আলোচনা - রাজা

বাংলা ভাষার ‘প্রথম’ নিদর্শন গীতগোবিন্দ কাব্য

Book Review: প্রগতির চেতনা প্রগতির পথিকেরা

জামাইষষ্ঠীর ইতিহাস

ভারতীয় গণনাট্য সংঘের ‘প্রতীক’ (The Logo of IPTA)

আমার মা

ঘরোয়া সিরিজ: শুচিবায়ী বাঙালী