ঘরোয়া সিরিজ: শুচিবায়ী বাঙালী


       কয়েকদিন ধরেই ‘ঘরোয়া সিরিজ’ নামে একটা সিরিজ লিখে চলেছি। লেখাটি সেই সিরিজের একটি অংশ। এটি ‘ভাবনা থিয়েটার’ পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে গত মে’২০ সংখ্যায় বেরিয়েছিল। এর আগে ‘ঘরোয়া সিরিজ’-এর অন্য দুটি লেখা আমার ব্লগে পোষ্ট দিয়েছিলাম। ঘরোয়া অবন ঠাকুরের স্মৃতিকথার বয়ানে রানী চন্দের লেখা একটি Memoires এই সিরিজের সবগুলো গল্পই ঘরোয়া গ্রন্হ থেকে নেওয়া। গ্রন্হটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ “Book Reviewঘরোয়া পর্বটিতে লেখা আছে।

       যা হোক্‌, প্রসঙ্গে ফিরি। আমরা নিত্যদিন আমাদের মা, দিদিমাদের বকাঝকা করেছি, এমনকি আজো করে থাকি। এখন আমাদের বাড়ীর সর্ববয়োজেষ্ঠ্যা ব্যক্তিটি হলেন আমাদের বড় পিসী (প্রায় ৯০ বছর)তিনি কলপাড়ে গেলে ৫০০ লিটারের ট্যাঙ্কির পুরোটা এখনো লাগে। আমরা সবাই ভীষণ বিরক্ত হই। মধ্যবিত্ত বলে এই অপচয় নিয়ে একটু রাগও হয়। সেই থেকে ঝগড়া তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু কে জানত যে এমন দিন আসবে, আবালবৃদ্ধবনিতাকে নিয়ম করে ১ঘন্টা পরপর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। যারা পিসীকে গালমন্দ করত সবসময় বা এখনো করে তাদের বোধ জাগ্রত হলে আজ হয়তো একটু সহনশীল হত। কিন্তু ঐ - যেই লাউ সেই কদু।

       আজ পিসীর কথার সূত্র ধরে ঠাকুর বাড়ির একটি গল্প মনে পড়ে গেলগল্পটি ঘরোয়া গ্রন্হের একটি অংশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়ানে আমরা জানতে পাই। আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে কোলকাতার নামী পরিবারগুলোর বড় বড় মহামুনিরাও কিন্তু এই শুচিবায়ীতা বলি বা শুদ্ধতা বলি, তা কঠোরভাবে মেনে চলতেনতেমনি এক দিনের ঘটনা। একবার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশ শরীর খারাপ হয়েছে। বাড়ীতে ডাক্তার এসেছেন উনাকে দেখতে, ডাক্তার সণ্ডার্স, তিনি ছিলেন ঠাকুর বাড়ীর ফ্যামিলি ডাক্তার। ডাক্তার যেমন দেখার তেমনটা দেখেশুনে যাবার সময় বরাবরের মত হ্যাণ্ডশেক করে গেলেন। মহর্ষিও ‘Thank You Doctor’ বলে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন। এ ছিল সেই সময়ের দস্তুর, ভদ্রতা। ডাক্তার তো তার মতো বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু মহর্ষির হাত আর নামে না। যে হাত দিয়ে তিনি হ্যাণ্ডশেক করেছিলেন সেই হাতখানি টান করে রেখেছেন হাতের পাঁচটা আঙুল ফাঁকা করে। অবনঠাকুরের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতায় বলছেন, তখন “দীপুদা (দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুর) বললেন, হল কী। কর্তাদাদামশায়ের (মহর্ষি) হাত আর নামে না কেন, শক-টক লাগল নাকি”। বিষয়টি সত্যিই চিন্তার। একে তিনি অসুস্হ্য তায় আবার এমন স্হির হয়ে বসে আছেন। কিন্তু চাকররা জানত কি করতে হবে। তাড়াতাড়ি করে একটি ফিংগার বোলে করে জল এল। সে এক মহা কাণ্ড। মহর্ষির হাতের কাছে এনে রাখতেই তিনি তার মধ্যে হাত ডুবিয়ে ভালো করে ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে বেশ করে মুছে তবে ঠিকঠাক হয়ে বসলেন। এটা তো শুচিবায়ীতাই। আর যত দোষ নন্দ ঘোষ!!

সবাই হাসিখুশি থেকো। Enjoy Your Time.


Comments

Popular posts from this blog

নাট্য আলোচনা - রাজা

বাংলা ভাষার ‘প্রথম’ নিদর্শন গীতগোবিন্দ কাব্য

Book Review: প্রগতির চেতনা প্রগতির পথিকেরা

জামাইষষ্ঠীর ইতিহাস

ভারতীয় গণনাট্য সংঘের ‘প্রতীক’ (The Logo of IPTA)

আমার মা