ঘরোয়া সিরিজ – “সুরভোলা রবীন্দ্রনাথ”
এই সিরিজের সবগুলো গল্পই ঘরোয়া গ্রন্হ থেকে নেওয়া।
গ্রন্হটি নিয়ে অল্পবিস্তর কথা Book Review – ঘরোয়া পর্বটিতে লেখা আছে।
পুরো বইটি জুড়ে আমরা নানাভাবে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করতে
পরি। তার মধ্যে একটি তাঁর সুরভোলা স্বভাব। গুনীজনেরা নানাসময় তাদের স্মৃতিচারণায় গুরুদেবের এই সুর মনে রাখতে পারার বিষয়টি বলেছেন। তিনি তাঁর রচিত গানে সুরারোপ
করেই কারো না কারো গলায় তুলে দিতেন।
যদিও আজকের এই গল্পটি অনেক কাল আগের কথা। তখন যৌবনে রবীন্দ্রনাথ।
জোড়াসাঁকোর বাড়ীতেই তাঁর বসত। তখনকার কালে রবীন্দ্রনাথের সুর ধরা থাকত অবন ঠাকুরের
এসরাজে। অবন ঠাকুর বলছেন, “দিনুরা [দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর] তখন খুব ছোটো – রবিকাকা গানে নতুন সুর দিলে আমারই
ডাক পড়ত”।
সে এক দিনের কথা। গুরুদেব নতুন গান লিখেছেন। তৎক্ষনাৎ সেই
গানের সুরারোপও সম্পন্ন। অবন ঠাকুরও সেথায় গানের সাথে যেমন বাজান তেমনি বাজিয়ে যাচ্ছেন।
তখনকার সময়টাই এমন ছিল যে, দুই মনভোলা মানুষ সুরের দিশায় পাল তুলেছে অথচ খেয়ালই
হয়নি যে, সুর মনে রাখতে হবে।
পরদিন গুরুদেব যখন সেই গানের সুরটি বাজাতে বল্লেন, বাস্,
সব শেষ। অবন ঠাকুর তো বেমালুম ভুলে বসে আছেন। অবন ঠাকুর লিখছেন, “আমার ভিতরে তো
সুর নেই, সুর মনে রাখব কি করে। কান তৈরী হয়েছে, হাত পেকেছে, যা শুনি সঙ্গে সঙ্গে
বাজনায় ধরতে পারি, এই যা। এদিকে রবিকাকাও গানে সুর বসিয়ে দিয়েই পরে ভুলে যান। অন্য
কেউ সুরটি মনে ধরে রাখে। রবিকাকাকে বললুম, কি যেন সুরটি ছিল, একটু একটু মনে আসছে।
রবিকাকা বললেন, বেশ করেছ, তুমিও ভুলেছ আমিও ভুলেছি। আবার আমাকে নতুন করে খাটাবে
দেখছি”।
তবে এরপর থেকে অবনঠাকুরের আর এমন সমস্যা হয়নি। তিনি তার
বাজনাতে সুর ধরে রাখতে অভ্যেস করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই দিনের হারিয়ে ফেলা সুরের
জন্য এক নিদারুণ স্বীকারোক্তিতে লিখছেন – “ঐ একটি সুর রবিকাকার আমি হারিয়েছি – কেউ
আর পেলে না কোনোদিন, তিনিও পেলেন না”। যদিও কোন্ গান ছিল সেটা - গ্রন্হে তার কোনো
উল্ল্যেখ নেই।
Comments
Post a Comment