Book Review: প্রগতির চেতনা প্রগতির পথিকেরা
![]() |
Cover Page of the Book |
বইটিকে একটি ঐতিহাসিক দলিল বল্লে আশা করি অত্যুক্তি হবে না। নাট্যাচর্চারত সকল মানুষের জন্য অবশ্যই পাঠ্য একটি বই। আমরা নাট্যচর্চা করব অথচ আমাদের অতীত ইতিহাস জানবো না, তাহলে কি করে হবে। এছাড়াও যারা কিছুটা সাম্যবাদী ভাবধারার সাথে সম্পৃক্ত বা এই ভাবধারার সাথে নিজেদের ভালো লাগা মিশে আছে তাদেরও অবশ্য পাঠ্য।
যাহোক্, বই-এর প্রসঙ্গে আসি। বইটি ‘একুশে সংসদ’ থেকে
প্রকাশিত (১ম সংস্করণ; ফেব্রুয়ারী ২০০৮) এবং সম্পাদনা করেছেন দেবাশিস সেনগুপ্ত। সম্পাদক খুব নিপুণ হাতে বইটি
সম্পাদনা করেছেন। বইটি যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময়ের ইতিহাসকে তুলে আনছে – তাই তার
একটি নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডীও নির্ধারিত করা হয়েছে; তা হলো ১৯৩৬ থেকে ১৯৫০ – ঠিক দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধকে মাঝখানে রেখে যেই আন্দোলন সংগ্রামের বিস্তার। পশ্চিমবাংলা এবং
বাংলাদেশ – এই দুই জায়গার নাট্যশিল্পীদের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। কারণ এই
দুই অঞ্চলেরই নাট্য ইতিহাস মূলত দেশভাগ (১৯৪৭) পর্যন্ত এক সূতোয় বাঁধা ছিল, এমনকি
তার পরবর্তী কালেও সেই সূতোয় খুব একটা টান পড়েছে বলে মনে হয়না। তাই সেই ইতিহাসে
ডুব দিতে সকলের Reading List-এ এই বইটি রাখা উচিৎ বলে
আমি মনে করি।
সম্পাদক মহাশয় মূলত বইটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছেন।
প্রথমটি ‘প্রগতির চেতনা’ অংশ যেখানে আলোচিত হয়েছে “অবিভক্ত [ভারতীয়] কমিউনিষ্ট
পার্টির প্রত্যক্ষ সাহচর্যে যুদ্ধবিরোধী ও সাম্যবাদী গণসংগঠনের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠা
বাংলার নতুন ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে একগুচ্ছ [৬টি] প্রবন্ধ”
(দেবাশিস সেনগুপ্ত, ভূমিকা অংশ)।
প্রথম প্রবন্ধটি লিখেছেন রীণা ভাদুড়ি যার নাম “প্রগতি থেকে
গণনাট্য”। খুব সাবলীলভাবে প্রবন্ধকার ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ থেকে শুরু করে ‘ভারতীয়
গণনাট্য সংঘ’ পর্যন্ত যে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্য দিয়ে একটি সুবৃহৎ সাংস্কৃতিক
আন্দোলন রূপ নিয়েছিল তার নাতিদীর্ঘ বর্ণনা করেছেন। খুবই প্রানবন্ত এবং সত্যনিষ্ট
ভাবেই তিনি পুরো আলোচনাটি উপস্হাপন করেছেন। নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি তিনি
একপেশে মনোভাব রাখেননি আর সেকারণেই তাঁর প্রবন্ধটি কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠেছে বলে
অন্তত আমি মনে করি।
দ্বিতীয় প্রবন্ধটি “ইয়ুথ কালচারাল ইনস্টিটিউট” শিরোনামে
লিখেছেন জলি কওল। অত:পর “বাংলা সাহিত্যে ফ্যাসিবাদ বিরূদ্ধতা ও প্রগতি ভাবনা” নিয়ে
লিখছেন সুমিতা চক্রবর্তী। এরপর “গণনাট্য সংঘ পাঁচ দশকের উত্তরাধিকার” শিরোনামে
লিখছেন তীর্থঙ্কর চন্দ। পরের প্রবন্ধটি লিখছেন মৃণাল সেন “ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ
(১৯৪০-১৯৭০)” শিরোনামে।
সর্বশেষ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে চিন্মোহন সেহানবীশের ৪৬
নং একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে নামক একটি গ্রন্হের “৪৬ নং” শীর্ষক
প্রবন্ধের নির্বাচিত অংশ। ৪৬ নম্বর আসলে ধর্মতলা ষ্ট্রিটের একটি বাড়ির নম্বর। এটি
একটি ঐতিহাসিক বাড়ি যেখান থেকে সকল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরিচলনা কার্য সম্পন্ন
হত। প্রবন্ধটি নিজেই একটি সংকলিত ইতিহাস। খুবই প্রানবন্ত রচনা।
এছাড়া বইটির দ্বিতীয় অংশে ‘প্রগতির পথিক’দের আলোচনা হয়েছে যারা নানাভাবে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ (১৯৩৬), ‘ইউথ কালাচারাল ইনস্টিটিউট’ (১৯৩৯), ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’ (১৯৪১), ‘ফ্যাসিস্ট বিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’ (১৯৪২), এবং সর্বোপরি ‘ভারতীয় গণনাট্য সংঘে’র (১৯৪৩) সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত ছিলেন। তবে ভূমিকা সূত্রে সম্পাদক লিখছেন, ‘‘ভারতীয় গণনাট্য সংঘে’র নাট্যকর্মীদের মধ্যে তাদের কথাই আলোচিত হয়েছে যারা ১৯৫০ সালের মধ্যে সংঘে যোগদান করেছিলেন’। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত এই ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আছেন মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, রাহুল সাংকৃত্যায়ন, তুলসী লাহিড়ী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব, মানিকবন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, গঙ্গাপদ বসু, রণেশ দাশগুপ্ত, দেবব্রত বিশ্বাস, সুধী প্রধান, জয়নুল আবেদীন, শম্ভু মিত্র, বিজন ভট্টাচার্য, পানু পাল, সোমেন চন্দ, সোমনাথ হোর, কামরুল হাসান, তাপস সেন, তৃপ্তি মিত্র, ঋত্বিক ঘটক, মুনীর চৌধুরী, উৎপল দত্ত ছাড়াও আছেন সেকালের প্রতিষ্ঠিত সব সাহিত্যিক, কবি এবং চিত্রশিল্পীদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। এই আলোচনা থেকে আন্দোলন সংগ্রামে তাদের ভূমিকার পাশাপাশি অবশ্যই দেশভাগ পরবর্তী নাট্যচর্চার কিঞ্চিত রূপরেখা পাওয়া যাবে। সর্বমোট ৯৫ জন প্রগতির পথিকের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস এই পর্বে স্হান পেয়েছে যারা এই বাংলার তথা ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত বলে সদা স্বীকৃত।
Reviewer ke dhonyobad
ReplyDeletepathokder drishti akorshon
korar jonyo
Thank you so much...Jodio apnar porichoi janina kintu so many thanks - je apni amar review ta porechen...Khub valo lagbe jodi share koren aro onek Pathok ke janate...
DeleteThank you...Valo thakben...
Bivash.
https://artistbivash.blogspot.com/2020/05/logo-of-ipta.html
ReplyDelete