ভারতীয় গণনাট্য সংঘের ‘প্রতীক’ (The Logo of IPTA)

    আমরা যারা নাটক নিয়ে চর্চা করি তারা সকলেই কমবেশি গণনাট্যের সাথে পরিচিত। কেউ হয়তো সেই আদর্শ নিয়ে নাট্যচর্চায় রত আবার কেউ হয়তো ইতিহাস হিসেবেই গণনাট্য আন্দোলনকে দেখে থাকেন। যদিও ইতিহাস নিয়ে এখানে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়।

    এই করোনা সংকটকালে নিজের পড়াশোনা নিয়েই একটু ব্যস্ততায় কাটছে। তারই এক ফাঁকে হঠাৎ অভীক দা’র (অভীক ভট্টাচার্য, সম্পাদক, ভাবনা থিয়েটার) কল্যাণে হাতে এলো প্রগতি চেতনা প্রগতির পথিকেরা নাম্নী একটি বই। এখনো পুরোটা পড়ে উঠতে পারিনি। শুধু রীণা ভাদুরী রচিত প্রথম প্রবন্ধটা পড়া হয়েছে। বেশ শক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ এবং ‘ভারতীয় গণনাট্য সংঘ’ নিয়ে। পরবর্তীতে কোথাও সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে অবশ্যই।

    আমাদের আলোচনার বিষয় হলো গণনাট্যের যে লোগোটা আমরা দেখে থাকি বা যেটা দেখলেই আমরা বুঝে যাই এটা গণনাট্যের লোগো – সেই নিয়ে। মানে হলো, সেই লোগোটি কীভাবে তৈরী হয়েছে। যখন জেনেছি তখন আমার কাছে খুবই মজাদার একটা ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। হয়তো অনেকেই জানেন। তারপরেও আমার ক্ষুদ্র আনন্দটুকু সকলের সাথে একটু ভাগ করে নিলাম।

    এই বিষয় নিয়ে জানতে হলে প্রথমেই যে দুইজন মানুষের কথা সামনে আসবে তারা একদা IPTA (Indian People’s Theatre Association)–এর প্রাণ ছিলেন। একজন হলেন শান্তি বর্ধন এবং অপরজন চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। শান্তি বর্ধন ছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী এবং চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী। উনাদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকলে খুব সহজেই তা জানা সম্ভব। পরবর্তীকালে দুইজনেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিখ্যাত হয়েছেন।

    নিশ্চয়ই আমাদের জানা আছে যে, আনুষ্ঠানিকভাবে IPTA-এর জন্ম হয়েছিল বোম্বেতে। যদিও তার আগেই তার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তবে আজকের এই ঘটনাটি যেভাবে বিবৃত আছে বইটিতে তাতে কিছু বিষয় ঠিক পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত নয়। তবে ধরে নেওয়া যায় ‘ঘটনাটির সূত্রপাত হয়েছিল IPTA বোম্বের আন্ধেরি কমিউনে। শান্তি বর্ধন সেই কমিউনেই থাকতেন। তার খুব কাছেই রুবি টেরেস নামে একটি বাড়ীতে থাকতেন চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। প্রায় রোজই তার একবার আসা হত সংঘের কমিউনে। একদিন শান্তি বর্ধন প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে মহলা কক্ষের বাইরে রাখা ভেরিটি (ছবিতে আমরা যে বাদ্যযন্ত্রটি দেখতে পাই) বাজাচ্ছিলেন আর এমনি সময় চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যও এসেছেন সেখানে। চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য হঠাৎ চিৎকার করে উঠে বললেন, ‘শান্তি থামো, নড়বে না। ওমনি করে দাঁড়াও’। নাচের মানুষ শান্তি বর্ধন। শোনামাত্র বাজনা থামিয়ে আপন শরীরি ছন্দ বজায় রেখে দাঁড়িয়ে রইলেন। চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের সেদিনের স্কেচবুকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফুটে উঠল - জীবন্ত ইতিহাস। ‘ভারতীয় গণনাট্য সংঘ’ (IPTA)-র প্রতীক’।

 

    বই-এ উল্লেখিত তথ্যটি সম্পাদক (দেবাশিস সেনগুপ্ত) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যেখানে তথ্যসূত্র হিসেবে অন্য একজন প্রখ্যাত গণনাট্য শিল্পীর নাম রয়েছে – রেবা রায় চৌধুরী।


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

নাট্য আলোচনা - রাজা

বাংলা ভাষার ‘প্রথম’ নিদর্শন গীতগোবিন্দ কাব্য

Book Review: প্রগতির চেতনা প্রগতির পথিকেরা

জামাইষষ্ঠীর ইতিহাস

আমার মা

ঘরোয়া সিরিজ: শুচিবায়ী বাঙালী